মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, প্রতিবেদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চারুকলা বিভাগে একদিন আগেই ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়া হয়েছে। বিভাগের আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেচে গেয়ে ‘বসন্ত বরণ ও ভর্তা উৎসব’ উদযাপিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউটিলিটি ভবনের ছাদে সোমবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। বসন্তকে বরণ করার পাশাপাশি বিশেষ আয়োজন হিসেবে ভর্তা উৎসবের আয়োজন করে চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী পালন করা হয় বসন্ত বরণ উৎসব। এ সময় বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছবি-সেলফি তোলাসহ খোশগল্পে মেতে উঠে। অনুষ্ঠান শেষে সকলে মিলে আনন্দঘন পরিবেশে ভাত-ভর্তা উৎসবে মেতে উঠে।
এসময় চারুকলার ছাদে সূর্যমুখী ফুলে মঞ্চ সাজানো হয়। দখিনা হাওয়ায় উড়ছে কাগুজে সাজানো ফুল। হলুদ, গোলাপি, নীল, লাল শাড়িতে মেতে উঠে তরুণীরা। সবার মাথায় বসন্তের আগমনী ফুলের মালা। ছেলেরা পড়েছে হরেক রকমের পাঞ্জাবি। ভাতে ভর্তা সবাইকে করা হচ্ছে আপ্যায়ন।
চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার মুনা বলেন, ‘প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে বসন্ত বরণ উৎসবকে সর্বাত্মক ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করেছি। বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে দৃঢ় রেখে আগামী দিনগুলোতেও এই উৎস উৎসব পালন করবো।’
এছাড়াও এবছর ভর্তা উৎসব বসন্ত বরণ উৎসবকে অন্য আমেজ এনে দেয়। এই আয়োজনে ভর্তাগুলোর মধ্যে ছিল টমেটো আলু ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা, শিম ভর্তা, ডাল ভর্তা, টমেটো ভর্তা ও বিভিন্ন প্রকারের শুটকি ভর্তাসহ প্রায় ১৫ প্রকারের ভর্তার সমারোহ। সাথে ছিল বিশেষভাবে রান্না করা ভাত।
ভাত-ভর্তা খেয়ে বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে মিশু জানান, ‘ভর্তাগুলো খুবই সুস্বাদু ছিল। এটি এবারের বসন্ত বরণ উৎসবকে ভিন্ন আমেজ এনে দিয়েছে। নগর জীবনে এমন আয়োজন বাঙালির সাংস্কৃতিক সত্তাকে জাগিয়ে তুলে।’
চারুকলা বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা আমাদের বিভাগে বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে বসন্তবরণ উৎসব করেছি। আমরা চায় ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পর্ককে দৃঢ় রেখে যেনো আগামি বছর আবারও আমরা এ উৎসব পালন করতে পারি।
বসন্ত বরণ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমাদের বাঙালি জাতির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকি, যে যেই ধর্মেরই হই না কেনো উৎসব একসাথে উদযাপন করি, ঈদ বা পূজা যেটায় হোক সবাই একসাথে পালন করি। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে থাকি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটা উৎসব একেকটা বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে করেছে। এখন বিভিন্ন বিভাগ এসব অনুষ্ঠান আলাদা আলাদা ভাবে করে। চারুকলার এমন আয়োজন বাঙালির সংস্কৃতিকে ধারণ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চাকে গতিশীল করছে।’
অনুষ্ঠানে চারুকলা বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত আমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ, বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।